মুক্তিযুদ্ধে সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ
ড. বেলাল হোসেন
সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৩ সালে। কাজেই ভাষা আন্দোলনের ঢেউ তাকে স্পর্শ করেনি। জেলার একমাত্র নারী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এবং প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান সরকারি আজিজুল হক কলেজের পুরাতন ক্যাম্পাস সংলগ্ন হওয়ায় (দূরত্ব মাত্র ১০০ মিটার) এখানকার সমকালীন রাজনৈতিক হাওয়া কমবেশি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজকেও স্পর্শ করতো। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলন, ৬৭-৬৮’র খাত বেয়ে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচনী উত্তাপে মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীগণ আন্দোলিত ও উদ্বেলিত হয়েছে। কলেজের সে সময়কার শিক্ষার্থীদের বয়ান থেকে জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিলে পরদিন ৮ মার্চ থেকে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের অনেকেই লাঠি ও ড্যামি রাইফেল নিয়ে যুদ্ধের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করে১।
২৫ মার্চ ১৯৭১-এর কালরাতে পাকবাহিনী ঢাকায় অপারেশন সার্চ লাইটের নামে পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমগ্র ঢাকা শহরে নারকীয় হত্যাকাণ্ড ও তাণ্ডবলীলা শুরু করলে টেলিফোন এবং ওয়ারলেস মারফত রাতেই সে খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যরাতে বগুড়ার স্থানীয় জনগণ লাঠিসোটা, বর্শা, বল্লম, দা, বটি, খন্তা, কুড়াল, বন্দুক-যার যা আছে তাই নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। এদিকে ঢাকায় পাকবাহিনীর অপারেশন এবং পিলখানা আক্রান্তের খবর পেয়ে নওগাঁয় অবস্থিত রাজশাহীর ৭ নং ইপিআর উইং তৎক্ষণাৎ বিদ্রোহ করে। এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন ৭ নং উইংয়ে সদ্য যোগদানকৃত বাঙালি অফিসার কমান্ডার মেজর নাজমুল হক২। [পরবর্তীতে তিনি ৭নং সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত হন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ তারিখে তিনি নিজে ড্রাইভ করা অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।]
সে সময় বগুড়ায় কোনো সেনানিবাস ছিল না। কিন্তু রংপুরে অবস্থিত ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির একটি শাখা ছিল বগুড়ার আড়িয়া বাজারে। এখান থেকে উত্তর জনপদের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের ক্যান্টনমেন্টে সেনাদের গুলি ও গোলাবারুদ সরবরাহ করা হতো। এই অ্যামুনিশন পয়েন্ট গার্ড করার জন্য ছিল অর্ডিন্যান্স কোরের এক প্লাটুন সৈনিক। এই অর্ডিন্যান্সকোরের সৈনিকরা পদাতিক কোরের সৈনিকদের মতো যুদ্ধবিদ্যায় ও রণকৌশলে তেমন পারদর্শী ছিল না। তাই ২৩ ব্রিগেড কমান্ডার পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহ খান মালিক খুবই চিন্তিত ছিলেন বগুড়ায় অবস্থিত এই অ্যামুনিশন পয়েন্ট নিয়ে। কারণ, যদি কোনো রকমে এটা বাঙালিদের হাতে চলে যায় তবে উত্তর জনপদের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য এটা হবে আত্মাহত্যার সামিল৩। তাই যেকোনো মূল্যে এই অ্যামুনিশন পয়েন্টকে রক্ষা করা ছিল ২৩ ব্রিগেডের প্রধান কর্তব্য। সে সময় ২৩ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার ছিল রংপুরে। এই ব্রিগেডের অধীনে ছিল ২৬ এ এফ রেজিমেন্ট, ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট, ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি ও ৩ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট। ২৫ মার্চ রাতেই ২৩ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স মরফত খবর পৌঁছে যে, ঢাকার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বগুড়ার স্থানীয় জনগণ সশস্ত্র অবস্থায় রাস্তায় নেমে এসেছে এবং আড়িয়াবাজারের অ্যামুনিশন পয়েন্ট দখল করার জন্য ইপিআরের ৭ নং উইং কমান্ডার মেজর নাজমুল নওগাঁ থেকে তাঁর ব্যাটালিয়ন নিয়ে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেছে। এ খবর পেয়ে ২৩ বিগ্রেড কমান্ডার আবদুল্লাহ খান মালিক ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির পাঞ্জাবি অধিনায়ক লেঃ কর্নেল সফিকে তার যে কোম্পানি বগুড়ার আইএস ডিউটিতে ছিল তাদেরকে অতিসত্ত¡র অ্যামুনিশন পয়েন্ট নিজেদের হেফাজতে নেয়ার আদেশ দেন এবং নিজে তাঁর ব্রিগেডসহ বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা করেন৪।
সে সময় ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্টের এক কোম্পানি সৈনিক চলমান আন্দোলন ঠেকাতে বগুড়ার ওয়াপদা ডাক বাংলোয় (মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ থেকে মাত্র ৩০০ মিটার উত্তরে অবস্থিত) আইএস ডিউটিরত ছিল। এরা সংখ্যায় এতো অল্প ছিল যে, রাতে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতার সামনে দাঁড়ানোর সাহস পায় নি। ওয়ারলেসের মাধ্যমে রংপুর থেকে পাকবাহিনীর বগুড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রার খবর পেয়ে জনতা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তারা বনানী থেকে মহাস্থান পর্যন্ত শহরের একমাত্র প্রধান সড়কের নানা স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। ভোর পাঁচটা নাগাদ পাক আর্মি মহাস্থান অতিক্রম করে বাঘোপাড়ায় প্রথম প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। এখানে তোতা মিয়া নামে একজন রিকসাচালক পাকবাহিনীর গুলিতে শহিদ হন। পাকবাহিনী ব্যারিকেড ঠেলে এলোপাথারি গুলি করতে করতে শহরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। তারা সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ সংলগ্ন সুবিল ব্রিজের নিকট পৌঁছুলে প্রচণ্ড প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ২৬ মার্চ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়েও পাকবাহিনী রেলগেট অতিক্রম করে দক্ষিণে শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারেনি। এ দিন সুবিল থেকে রেলগেট পর্যন্ত প্রতিরোধ যুদ্ধে বগুড়ার বেশ কয়েকজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। এঁদের মধ্যে শহিদ আজাদ ও শহিদ হিরু অন্যতম। সন্ধ্যায় পাকবাহিনী পিছু হটে মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে এবং ওয়াপদায় ক্যাম্প স্থাপন করে। কলেজের ছাদের ওপর তারা মেশিনগান সেট করে।
একটি সামরিক স্থাপনার জন্য যে ধরনের পরিবেশ দরকার মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের পরিবেশটি ছিল তদ্রুপ। বাউন্ডারি ঘেরা নিরাপদ ক্যাম্পাস। সুবিল ছিলো প্রাকৃতিক পরিখা। দক্ষিণ দিকটি ছিল একেবারে ফাঁকা। দোতলা থেকে বহুদুর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা যেত। ফলে খুব আকৃষ্ট হয়ে পাকবাহিনী এখানে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। পরদিন ২৭ মার্চ মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস লক্ষ্য করে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি আক্রমণ পরিচালিত হয়। এই যুদ্ধে কলেজের উত্তরে, পূর্বে এবং দক্ষিণে সুবিল সংলগ্ন জঙ্গল-জলাভূমিতে ও কটনমিলে অবস্থান নিয়ে তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে প্রতিরোধ আক্রমণ শুরু করে। ইপিআর, পুলিশ এবং ৫০-৬০ জন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার (ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ জনতা) সমন্বয়ে এ প্রতিরোধ যুদ্ধ পরিচালিত হয়। এটি ছিল বগুড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পিত প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ। এই আক্রমণের বিবরণ দিতে গিয়ে এই যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী ভাষা সৈনিক গাজীউল হক লিখেছেন :
২৭ শে মার্চ সকাল আটটা। সুবিলের উত্তর পাড় থেকে পাকসেনারা গুলীবর্ষণ শুরু করে। পাল্টা জবাব দেয় আমাদের ছেলেরা। এই দিন ঝন্টু, মাহমুদ, ডাঃ টি আহমদের ছেলে মাসুদ, গোলাম রসুল, বিহারীর ছেলে (নামটি মনে নেই), রশীদ খানের ছেলে গুলাব, রেডিও, রফিকুল ইসলাম লাল, শহীদ আবু সুফিয়ান রানা এবং আরো অনেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সকাল সাড়ে আটটার দিকে ডাঃ জাহিদুর রহমান পুলিশ লাইন থেকে বাহিনীর ৬০ জনের এক দলকে নিয়ে এলেন। ৩০৩ রাইফেল হাতে আমাদের ছেলেদের পাশাপাশি তারাও অবস্থান নিলেন। দুই পক্ষে প্রচণ্ড গোলাবৃষ্টি হলো। গোলাবৃষ্টির মধ্যেই হানাদার বাহিনী সড়ক ধরে এগিয়ে এসে শহরের উত্তর প্রান্তে কটন মিল দখল করলো (তখন বগুড়া শহরের উত্তর সীমার প্রান্তে ছিল কটন মিল)। পুলিশ এবং আমাদের ছেলেদের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে শহরের ভিতরে বেশী এগিয়ে আসতে পারলো না হানাদাররা। এদিনের যুদ্ধে পাকসেনারা ভারী মেশিনগান ব্যবহার করে এবং মর্টারের গোলাবর্ষণ করে। বিকেল তিনটায় মর্টারের গোলার আঘাতে শহীদ হলো তারেক, দশম শ্রেণীর ছাত্র। মৃত্যুর সময়েও তার হাতে ধরা ছিলো একটি একনলা বন্দুক। তারেকের রক্তে ভিজে গিয়েছিলো আমার বুক। মনে পড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদেছিলাম৫।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শিক্ষা পরিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান’ গ্রন্থের ষষ্ঠ খণ্ডে (২০১৫, পৃ. ৩২১) এ যুদ্ধের ভৌগোলিক সীমার একটি হাতনক্শা প্রকাশ করা হয়েছে। নক্শায় এই যুদ্ধকে মাটিডালীর অভিযান (রেইড) নামে চিহ্নিত করা হয়েছেু ু। নিচে নক্শাটি প্রদর্শিত হলো।
২৭ মার্চের সম্মিলিত এই প্রতিরোধ আক্রমণের ফলে সারাদিন পাকবাহিনী মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের ক্যাম্প থেকে বের হতে পারেনি। কিন্তু এদিন এখান থেকে পাকবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে সুুবিলের দক্ষিণ পয়েন্টে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয়া তরুণ বীর মুক্তিযোদ্ধা তারেক (দশম শ্রেণির ছাত্র) এবং পুলিশ সদস্য আবদুল করিম শহিদ হন। এছাড়াও, এদিন পাক আর্মির গুলিতে শিববাটিতে সোলায়মান নামে এক রিকসাচালকও শহিদ হন। পরদিন ২৮ মার্চ সকালেই পাকবাহিনী কটনমিল দখলে নেয় এবং এর ছাদে মেশিনগান সেট করে। এদিন পাকবাহিনী বগুড়া শহরের উত্তরাংশে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে অসংখ্য সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে আসে। ২৮ মার্চ ইপিআর ৭ নং উইংয়ের কমান্ডার বাঙালি অফিসার মেজর নাজমুল হকের নির্দেশে ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী তার বাহিনী নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বগুড়ায় পৌঁছান৭। তিনি ইপিআর, পুলিশ এবং সাধারণ মুুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি সম্মিলিত প্রতিরোধ আক্রমণ গড়ে তোলেন। এর মধ্যে ৩০ মার্চ নওগাঁ থেকে বগুড়ায় চলে আসেন মেজর নাজমুল। তিনি বগুড়া সার্কিট হাউসে একটি কন্ট্রোল রুম খুলে বসেন। ৩১ মার্চ রাতে মুক্তিযোদ্ধারা মহিলা কলেজের ক্যাম্পে গ্রেনেড চার্জ করে। এ প্রসঙ্গে গাজীউল হক আরও লিখেছেন :
“৩১ শে মার্চ। দিনের বেলা দু’পক্ষই নীরব। খবর এলো ক্যাপ্টেন আনোয়ার এবং ক্যাপ্টেন আশরাফের নেতৃত্বে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করে বেরিয়ে এসেছে এবং ঘোড়াঘাটে অবস্থান করছেন। ৩১ শে মার্চ রাতে অসীম সাহসী সুবেদার আকবরের নেতৃত্বে মুক্তি সেনারা মহিলা কলেজের ঘাঁটিতে গ্রেনেড চার্জ করলো। পেট্রোলের ড্রামে আগুন ধরিয়ে গড়িয়ে দেয়া হলো পাক সেনাদের ঘাঁটির দিকে। পাক সেনাদের ঘাঁটি থেকে লক্ষ্যবিহীন গুলির শব্দ শোনা গেলো। তারপর অন্ধকারে মোটর কনভয়ের শব্দ। কিছু বোঝা গেলো না। ভোরে দেখা গেলো পাক সেনা বগুড়া ছেড়ে অন্ধকারের মধ্যে রংপুরের দিকে পশ্চাদপসরণ করে গেছে৮।”
পালানোর আগে পাকবাহিনী কলেজের ক্যাম্পে আটকে রাখা লোকদের গুলি করে মেরে সুবিলে ফেলে দেয়। ওয়াপদা ক্যাম্পে আটকে রাখা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দোলন, হিটলু ও ছুনুকে জীবন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে মারে৯।
১ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বগুড়া শহর মোটামুটি শত্রুমুক্তু ছিল। ২২ এপ্রিল থেকে পাকবাহিনী পুনরায় বগুড়া শহরের দখল নিতে থাকে। ২৯ এপ্রিল বগুড়া শহর পুরোপুরি পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ২২ থেকে ২৯ এপ্রিল এই সময়ের মধ্যে পাকবাহিনী মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ, আজিজুল হক কলেজ (পুরাতন ও নতুন ভবন), ওয়াপদা, মহিলা কলেজের সামনের সিএন্ডবি রেস্টহাউস, বগুড়া রেল স্টেশনের এসডিও বাংলো, জেলা স্কুল প্রভৃতি স্থানে ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে। ১৬ ডিসেম্বর বগুড়া শহর শত্রæমুক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ সকল ক্যাম্পে রাজাকার-আলবদরের সহায়তায় পাকবাহিনী অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ এবং মা-বোনকে আটকে রেখে নানাভাবে নির্যাতন করে।
মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে ক্যাম্প স্থাপন করে পাকবাহিনী কলেজের একাডেমিক ভবনের নিচতলা (বর্তমানে কক্ষ নং ১০৮, ১০৯ ও ১১০), দোতলা (কক্ষ নং ২০৮, ২০৯ এবং অথ্যনীতি ও বাংলা বিভাগ) এবং মেয়েদের হোস্টেল (ময়জান নেছা হল) ব্যারাক হিসেবে ব্যবহার করে। তখন কলেজ ক্যাম্পাসে এই একটি মাত্র বিল্ডিং ছিল। অধ্যক্ষ কক্ষের ছাদের ওপর উত্তর ও দক্ষিণ দিকে মুক্তিযুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময় দুটি মেশিন গান সেট করা ছিল১০। প্রথম পর্যায়ে ২৬ থেকে ৩১ মার্চ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২২ এপ্রিল থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় আট মাস মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ পাকবাহিনীর ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
(সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের এই একাডেমিক ভবনটিকেই ১৯৭১ সালে
প্রায় ৮ মাস পাকবাহিনী তাদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে।)
মুক্তিযুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময় স্থানীয় রাজাকার-আলবদরদের সহায়তায় পাকবাহিনী অনেক মুক্তিযোদ্ধা এবং মা-বোনকে ধরে এনে এই ক্যাম্পে নির্যাতন চালায়। অনেককে হত্যা করে সুবিলে ফেলে দেয়। মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ শত্রæমুক্ত হয় ১৫ ডিসেম্বর। এদিন মহিলা কলেজ কীভাবে শত্রæমুক্ত হয় তার একটি বিবরণ পাওয়া যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য বগুড়ার একমাত্র ছাত্র বীরবিক্রম বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হোসেন তারেক রচিত ‘রোড-টু-বগুড়া ১৯৭১’ (২০০৯) গ্রন্থে। বগুড়াকে মুক্ত করার জন্য ভারতীয় যৌথবাহিনীর সঙ্গে তিনি সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ এবং এর আশেপাশের যুদ্ধ পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে জনাব হামিদুল হোসেন তারেক লিখেছেন :
“১৪ ডিসেম্বর সকালে শহরের উপরে সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু হয়ে গেল। ২/৫ গুর্খা রেজিমেন্ট ও ৬৩ ক্যাভিল্যারী সম্মিলিত আক্রমণ করলো মাটিডালী ও ওয়াপদা এরিয়ার পাকসেনাদের উপরে। পাকসেনারা মেশিনগান, মর্টার আর আর্টিলারী সমন্বয়ে বৃষ্টির মতো গোলাগুলি চালিয়ে যেতে লাগলো। ট্যাংকগুলো এগুতে পারলো না। কারণ সামনে ওয়াপদা এলাকার পাকা বাড়ি ঘর আর ওর মধ্যেই বাংকার করে বসে আছে শত্রু। এই প্রথমবারের মতো বগুড়া শহরের উপর ভারতীয় বিমান বাহিনীর মিগ-২১ ফাইটার বিমান এলো বিমান আক্রমণে। ২/৫ রেজিমেন্টের সাথে যে এয়ার ওপি ছিল সে উঁচু এক দালানের উপরে উঠে টার্গেট নির্দেশ করলো বিমানের পাইলটকে। মুহূর্তের মধ্যে প্রচণ্ড জোরে কানে তালা লাগান শব্দে আমাদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে ড্রাইভ দিয়ে বোমা ফেললো ওয়াপদা এলাকার শত্রুর পজিশনের উপরে। প্রচণ্ড শব্দে মাটি কেঁপে ফাটল বোমাগুলো। ঝনঝন করে ভেঙে গেল অনেক বাড়ির কাঁচের জানালা। অনেক টিনের ঘরের টিনগুলো উড়ে গেল। পরপর বোমার আঘাতে কেঁপে উঠলো পুরো শহর। এয়ার বোম্বিং-এর একটা শক এফেক্ট আছে। এই শক এফেক্ট কাটার আগেই ২/৫ গুর্খা ও ৬৩ ক্যাভেলারী টি-৫৫ ট্যাংক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো। পাকসেনারা ওয়াপদা এলাকা, আজিজুল হক কলেজ, মহিলা কলেজ ও সুবিলের উপরে সিএন্ডবি রেস্ট হাউস ছেড়ে সুবিলের ওপারে কটন মিল এলাকায় গিয়ে পজিশন নিল। সুবিলের উপর অবস্থিত সিএন্ডবি রেস্ট হাউসে ঢুকার পর ঘটলো এক বেদনাদায়ক শিহরিত দৃশ্য। পাকসেনারা রেস্ট হাউসে একটি রুমে তালাবদ্ধ অবস্থায় ৪/৫ জন যুবতী মেয়েকে বন্দী করে রেখেছিল। তালা ভেঙে রুম খুলতেই হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো মেয়েগুলো। ছাড়া পেয়ে মেয়েগুলো তাদেরকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্য দু’ হাতে মুখ ঢেকে রেস্ট হাউসের পাশেই বৃন্দাবনপাড়ার দিকে দৌড়ে পালিয়ে গেল। রেস্ট হাউসের পাশেই ছিল একটা বাংকার। সেই বাংকারে পাওয়া গেল মেয়েদের মাথার চুলের কাটা, বেণী আর মাটিতে জমাট বাধা রক্ত। সারা রেস্ট হাউস জুড়ে ছিল পাশবিক অত্যাচারের চিহ্ন। এদিকে সুবিলের এপারে ট্যাংকগুলো থেকে গেল। আর আর দিয়ে ব্রিজ কভার করে রেখেছে পাকসেনারা। ট্যাংক ব্রিজের উপরে উঠলে তারা গোলা ছুঁড়বে। একমাত্র উপায় ২/৫ গুর্খা সুবিল খাল পার হয়ে কটন মিল এলাকা আক্রমণ করা। কিন্তু পুরো সুবিল খালের পাড় পাকসেনারা মাইন পেতে রেখেছে। ব্রিজ ছাড়া ওপারে যাওয়ার উপায় নেই। সময় দরকার১১। ”
(সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসের দক্ষিণপাশ
ঘেঁষে প্রাকৃতিক জলপ্রবাহ সুবিলখাল।)
সময় নিয়ে (১৫ ডিসেম্বর) ভোর পাঁচটার দিকে যৌথবাহিনী শহরের উত্তরে মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ ও সুবিল, দক্ষিণে বনানী, পূর্বে চেলোপাড়া ও ফতেহআলী ব্রিজ এবং পশ্চিমে পুরান বগুড়ার রেলগেট থেকে ট্যাঙ্ক, কামান ও মেশিনগান নিয়ে একযোগে সাড়াশি আক্রমণ শুরু করে। পাকবাহিনীর কয়েকজন সদস্য মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের ক্যাম্প থেকে ফুলবাড়ি গ্রামের ভেতর পালিয়ে গেলে গ্রামের লোকজন দা-বটি নিয়ে তাদের ধাওয়া করে। জনতার পিটুনিতে কয়েকজন সেখানেই প্রাণত্যাগ করে১২। অবস্থা বেগতিক দেখে বাকিরা যৌথবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করাকেই শ্রেয় মনে করে। ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৮.৩০ মিনিটে বগুড়া পুলিশ লাইন মাঠে বগুড়ায় পাকবাহিনীর সকল সদস্য অস্ত্র নামিয়ে যৌথবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। দীর্ঘ প্রায় ৮ মাস পর মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ বন্দিশৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ কী রকম ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছিল এবং সে সময় কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন ছিল তার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পাওয়া যায় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বাংলাদেশের বিশিষ্ট আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক ও রসায়নবিদ জনাব এম. এ হামিদের একটি লেখায়। ‘মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের ইত্তিবৃত্ত’ শিরোনামে “নির্ঝর-সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ বার্ষিকী ৮৬” সংখ্যায় তিনি লিখেছেন :
প্রাচীরবেষ্টিত মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে তাদের (পাকবাহিনী) নিরাপদ আস্তানা গেড়ে বসে। বর্বর সেনারা কলেজ লাইব্রেরীর বহু সংখ্যক মুল্যবান গ্রন্থ ও অফিসের খাতাপত্র দগ্ধীভূত করে রন্ধন কার্য সমাধা করে। তা’ছাড়া কলেজ বিজ্ঞানাগার ও অফিসের আলমারী ভেঙ্গে বহু সম্পদ তারা হস্তগত করে। তাদের হামলায় মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ছিল না। ঐ সময়ে অত্র কলেজ কমিটির সভাপতি বগুড়ার বিজ্ঞ জেলা প্রশাসক জনাব খানে আলম খান মুক্তি সংগ্রামে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করায় তাঁকে জেলা প্রশাসকের অফিস ও বাসভবন ত্যাগ করে নিভৃত এলাকায় আত্মগোপন ক’রে কাটাতে হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি ছদ্মবেশ ধারণ ক’রে বগুড়া ছেড়ে যান।
এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে অধ্যক্ষ সাবিত আলী নিজ বাসস্থান সিরাজগঞ্জে গিয়ে আত্মগোপন ক’রে থাকেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে মুক্তি সংগ্রামকালে অধ্যাপক আফছার আহমেদ খোন্দকার কিছুকাল কলেজের দায়িত্বে থাকেন। পাকসেনাগণ বাংলাদেশের শাসন কব্জা করার পর জেলা প্রশাসনকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খোলার এবং শিক্ষকবর্গকে নিয়মিত অফিসে হাজিরা দিবার আদেশ প্রদান করে। মহিলা কলেজ ভবন পাকসৈন্যদের দখলে থাকায় বগুড়ার সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের অফিস খোলা হয়। জুলাই / ৭১ হ’তে কিছু সংখ্যক অধ্যাপক তথায় হাজিরা দিতে থাকেন ; যাতায়াত ও অন্যান্য অসুবিধার কারণে তাঁরা দু’মাস পর (সেপ্টেম্বর/৭১ হ’তে) ভাণ্ডারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে হাজিরা দিতেন। ১৬ই ডিসেম্বর /৭১ পাকিস্তানী সৈন্যদের আত্মসমর্পণের পর স্বাধীন বাংলাদেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন সূর্যের সোনালী আলোকে ছাত্রীগণ দলে দলে কলেজে পদার্পণ করতে শুরু করে। কলেজ মাঠে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পরিসৃষ্ট হয় অর্ধ্ব-দগ্ধ গ্রন্থ, আসবাব পত্রের অংশ ও ভষ্মরাশি। কলেজে আসবাব বলতে কিছুই ছিল না- বলা চলে। যে কয়টি চেয়ার বেঞ্চ ছিল তার অধিকাংশই ভাঙ্গাচুড়া। এক কথায় কলেজটি শশ্মানের রূপ পরিগ্রহ ক’রেছিল১৩।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন জনাব সাবিত আলী। তিনি ছিলেন বগুড়ার কিশোর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ দোলনের পিতা। শহিদ দোলন বগুড়া জেলা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৩১ শে মার্চ ১৯৭১ তারিখে শহিদ দোলন কীভাবে শহিদ হন এ বিষয়ে পূর্বেই বলা হয়েছে। পুত্রশোকে তিনি অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়েন। একদিকে পুত্রশোক এবং অন্যদিকে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি নিজ বাড়ি সিরাজগঞ্জে চলে যান। দেশ স্বাধীনের পর অধ্যক্ষ সাবিত আলী বগুড়ায় চলে আসেন। ১৯ শে জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে তাঁর এক মুক্তিযোদ্ধা ভাতিজা তাঁর মালতীনগরস্থ বাসায় দেখা করতে এলে তাকে অধীর আবেগে জড়িয়ে ধরে “আমার দোলন আমার দোলন” বলতে বলতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ওই অবস্থাতেই তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন১৪। ১৯৭১ সালে মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে ১৩ জন শিক্ষক ও ৭ জন কর্মচারী কর্মরত ছিল। এঁদের মধ্যে গণিত বিভাগের শিক্ষক জনাব বজলুর রহমান ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ শুধু কালের এক নীরব সাক্ষীই নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে কলেজটির ঐতিহাসিক সম্পৃক্ততা ও গৌরবোজ্জ্বল অবদান বগুড়াসহ সমগ্র দেশবাসীকে মহিমান্বিত করবে চিরকাল।
তথ্য নির্দেশ :
১. তথ্যদাতা :
ক. তহমিনা খাতুন, উচ্চ মাধ্যমিক ১৯৬৫-১৯৬৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। সাক্ষাৎকার গ্রহণ ২৫-০২-২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।
খ. ছালেহা খাতুন, উচ্চ মাধ্যমিক ১৯৭০-১৯৭১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। সাক্ষাৎকার গ্রহণ ২৫-০২-২০২৩ খ্রিস্টাব্দ। সাক্ষাৎকার স্থান : কলেজ প্রাঙ্গণ। সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের ৬০ বছর পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠানস্থল।
২. হামিদুল হোসেন তারেক, বীরবিক্রম, রোড-টু-বগুড়া ১৯৭১, পৃ. ১৭, ৯৬।
৩. পূর্বোক্ত প. ৯৬।
৪. পূর্বোক্ত, পৃ. ৯৬।
৫. গাজীউল হক, সশস্ত্র প্রতিরোধে বগুড়া, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, নবম খÐ (হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত], প্রথম প্রকাশ-জুন ১৯৮৪ (পুনর্মুদ্রণ ২০১০), গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, পৃ. ৩৪৩।
৬. মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান ৬ষ্ঠ খÐ ২০১৫, [পুনঃসম্পাদনায়-বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ এস এম মুশফিকুর রহমান, পিএসসি], বাংলাদেশ সেনাবাহিনী- সেনাসদর, শিক্ষা পরিদপ্তর, পৃ.২৭।
৭. বিগ্রেডিয়ার গিয়াস উদ্দিন আ. চৌধুরী বীরবিক্রম, রণাঙ্গণ রাজশাহী-বগুড়া, ২০১৪, সেন্টার ফর বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ, ঢাকা, পৃ. ৩০।
৮. গাজীউল হক, পূর্বোক্ত, পৃ. ৩৪৫।
৯. হামিদুল হোসেন তারেক, বীরবিক্রম, পূর্বোক্ত, পৃ. ৯৭।
১০. প্রত্যক্ষদর্শির বিবরণ-প্রফেসর মো. মোস্তফা আলী, সাবেক অধ্যক্ষ, সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ, বগুড়া। ঠিকানা-ফুলবাড়ি মধ্যপাড়া, বগুড়া। সাক্ষাৎকার গ্রহণ ১৬ ডিসেম্বর ২০২২
১১. হামিদুল হোসেন তারেক, পূর্বোক্ত, পৃ. ৭২-৭৩।
১২. ক্রমিক নং-১০ দ্রষ্টব্য।
১৩. অধ্যক্ষ এম.এ হামিদ, মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের ইতিবৃত্ত, নির্ঝর - মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ বাষির্কী-১৯৮৬, বগুড়া, পৃ. ৯৬-৯৭।
১৪। পূর্বোক্ত, পৃ-৯৬।
লেখক পরিচিতি
অধ্যাপক, বাংলা
অধ্যক্ষ, সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ, বগুড়া।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস