সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
বগুড়ার বিশিষ্ট শিল্পপতি মরহুম মজিবর রহমান১ ভাণ্ডারী তাঁর মা-ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাঙ্খীদের পরামর্শক্রমে সমাজ সেবার মহৎ উদ্দেশ্যে ১৯৫০ সালে মৃত দাদা ও পিতার নামে তমিজউদ্দিন-ময়েজ উদ্দিন ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এই ট্রাস্টের অধীনে ১৯৫০ সালে সুবিলের তীরে ভাণ্ডারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সেসময় বগুড়ায় কোনো আধুনিক হাসপাতাল ছিল না। বগুড়ার জনগণের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে ১৯৬২ সালে ভাণ্ডারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে উক্ত ট্রাস্টের উদ্যোগে একটি হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়। একই সময়ে ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব ডব্লিউ, এ, বাকী বগুড়ায় আগমন করলে বগুড়াবাসী একটি আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার আবেদন জানালে তিনি তা মঞ্জুর করেন। অতঃপর বগুড়া শহরে একটি হাসপাতাল নির্মিত হয় এবং বগুড়ার নবাব পরিবারের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর স্মৃতি রক্ষার্থে হাসপাতালটির নামকরণ করা হয় মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল। ফলে ভাণ্ডারী পরিবারের সদস্যগণ কর্তৃক সুবিল খালের পাড়ে নির্মিত ভবনটি আর হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়নি।
ইতোমধ্যে জনাব মজিবর রহমান ভাণ্ডারী অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং অসুস্থ অবস্থায় তিনি তাঁর ভাইদের নিকট সুবিল খালের পাড়ে নির্মিত ভবনটিকে একটি মহিলা কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য অছিয়ত করেন। অতঃপর ১৯৬৩ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি মতবিনিময় সভায় কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বগুড়া শহরে একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় এবং জেলা প্রশাসক জনাব এ. এম ওবায়েদুল্লাকে সভাপতি এবং ডা. হাবিবুর রহমানকে সম্পাদক করে মোট ১১ (এগারো) সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হয়। নবগঠিত কমিটির সদস্যবৃন্দ ভাণ্ডারী পরিবারের নিকট তাদের অসমাপ্ত হাসপাতাল ভবনটি এবং সংলগ্ন জমি মহিলা কলেজ স্থাপনের জন্য দান করতে অনুরোধ করেন। ভাণ্ডারী পরিবার দু’টি শর্তে কলেজ স্থাপনে রাজি হন। শর্ত দু’টি হচ্ছে - প্রথমত তাদের পরলোকগত জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মজিবর রহমান ভাণ্ডারীর নামে কলেজটির নামকরণ করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত কোনো কারণে কলেজ উঠে গেলে দানকৃত সম্পদ তারা ফিরে পাবে। উক্ত শর্ত নিয়ে কমিটির দু-একজন সদস্য আপত্তি জানালেও অধিকাংশ সদস্য সম্মতি জ্ঞাপন করেন। অতঃপর ১৭/০৩/১৯৬৪ খ্রি. তারিখে মজিবর রহমান ভাণ্ডারীর তিন সহোদর -জনাব হাবিবুর রহমান ভাণ্ডারী, জনাব মোজাফফর রহমান ভাণ্ডারী, জনাব মোখলেছুর রহমান ভাণ্ডারী এবং দুই পুত্র - জনাব গোলাম কিবরিয়া ভাণ্ডারী ও জনাব মতিয়ার রহমান ভাণ্ডারী সর্বমোট ৩.৭৫ একর জমিসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কলেজের নামে দলিল করে দেন (দলিল নং ৪৫২৩)।
কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৬৩ সালের ৩১ জুলাই। একই তারিখে কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন জনাব মোছাম্মাৎ নূরুন্নাহার বেগম। ৮ জন শিক্ষক (৩ জন স্থায়ী ও ৫ জন খÐকালীন), ৭ জন কর্মচারী (তৃতীয় শ্রেণি ২ জন এবং চতুর্থ শ্রেণি ৫ জন) এবং ২৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬৩ - ১৯৬৪ শিক্ষাবর্ষে শুধুমাত্র একাদশ মানবিক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। পাঠ্য বিষয় হিসেবে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, পৌরনীতি, যুক্তিবিদ্যা, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, উর্দু ও উচ্চতর বাংলা প্রবর্তিত হয়।
১৯৬৫ সালের ১ জুলাই হতে স্নাতক কোর্স শুরু হয়। ১৯৬৮ সালের জুলাই মাসে কলেজটিতে বাংলায় অনার্স এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান শাখা খোলা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দ্রুত গতিতে কলেজটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৬৪ সালে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫০, ১৯৬৫ সালে ৩৫০ এবং ১৯৬৬ সালে ৪৫০ অতিক্রম করে।
উল্লেখ্য যে, বর্তমানে (২০২৩ খ্রি.) কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক (মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা), ডিগ্রি পাস কোর্স, অনার্স (৮টি বিষয়- বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, দর্শন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও প্রাণিবিদ্যা) এবং মাস্টার্স (৭টি বিষয়- বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, দর্শন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি) মিলে সর্বমোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ (সাত) হাজার।
কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্নেই শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য একটি বাস ভাড়া করা হয়। এর চার বছর পর ১৯৬৭ সালে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কলেজের জন্য একটি মাইক্রোবাস ক্রয় করা হয় কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে মাইক্রোবাসটি ১৩০০০/- (তেরো হাজার) টাকায় বিক্রয় করে শিক্ষক-কর্মচারীদের আংশিক বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস