প্রতিষ্ঠাতাগণের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
**মজিবর রহমান ভাণ্ডারী:
মজিবর রহমান ভাণ্ডারী ১৯১৬ সালের ১ ডিসেম্বর বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে ৪ মে মাত্র ৪৭ বৎসর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পিতার নাম ময়েজ উদ্দিন শেখ ও মাতার নাম ময়েজন বেওয়া। প্রায় তিনশত বছর পূর্বে তাঁদের পূর্বপুরুষ ভারতের বিহার থেকে বগুড়ায় এসে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। মজিবর রহমান ভাণ্ডারী ১৫/১৬ বছর বয়সে একজন বিড়ি শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ফলে তাঁর পক্ষে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। মজিবর রহমান চার ভাই-বোনের মধ্যে বড়। তিনি ভাণ্ডারী বিড়ি ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক হিসেবে যোগদান করেন। মো. শমসের আলী ছিলেন ভাণ্ডারী বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক। তিনি চট্টগ্রামের পির মাইজ ভাণ্ডারীর মুরিদ ছিলেন এবং তাঁর নামানুসারে বিড়ি ফ্যাক্টরি নামকরণ করেন ‘ভাণ্ডারী বিড়ি ফ্যাক্টরি’। ফ্যাক্টরির মালিক মো. শমসের আলী, মজিবর রহমানের কর্মনিষ্ঠা, বিচক্ষণতা ও উদ্যোম দেখে তাঁকে ব্যবসায়ের অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করেন। মজিবর রহমান দক্ষতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করেন। ফলে অল্পদিনেই ব্যবসা উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। মো. শমসের আলী ধর্ম-কর্মে অধিক মনোযোগী হলে একপর্যায়ে তিনি মজিবর রহমানের নিকট ‘ভাণ্ডারী বিড়ি ফ্যাক্টরি’ বিক্রি করে দেন। ভাণ্ডারী বিড়ির খ্যাতি ও মুনাফা বৃদ্ধির সাথে সাথে মজিবর রহমানের নামের পদবী হিসেবে ‘ভাণ্ডারী’ কথাটি যুক্ত হয়ে যায়। তিনি বিড়ি ব্যবসার পাশাপাশি আরও কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা গড়ে তোলেন। মজিবর রহমান ভাণ্ডারী বগুড়া জেলার অন্যতম শিল্পোদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি তাঁর বিচক্ষণতা, অক্লান্ত পরিশ্রম ও ভাইদের ঐকান্তিক সহযোগিতায় শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে ‘ভাণ্ডারী শিল্পগোষ্ঠী’ গড়ে তোলেন। এছাড়াও তিনি স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও এতিমখানাসহ অনেক জনহিতকর কাজ করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি ‘রংপুর টোব্যাকো’ নামে তামাক ও টেণ্ডু পাতার ব্যবসা শুরু করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৪০ সালে ‘আটা ও তেলের মিল’, ১৯৪৩ সালে ‘মেসার্স গোলাম কিবরিয়া ওয়াকর্স’, ১৯৪৬ সালে ‘হাবিব ম্যাচ ফ্যাক্টরি’, ১৯৫৩ সালে ‘বগুড়া লিথোগ্রাফিক প্রিন্টিং প্রেস’, ১৯৫৪ সালে ‘বগুড়া কটন স্পিনিং কোম্পানি লিঃ’, ১৯৫৬ সালে ‘ভাণ্ডারী আয়রন ওয়াকর্স’, ১৯৬০ সালে ‘জাহাঙ্গীর পারফিউমারি ও নর্থ বেঙ্গল ট্যানারি’ প্রতিষ্ঠা করেন।
মজিবর রহমান ভাণ্ডারী শিক্ষানুরাগী ছিলেন। বগুড়া শহরের একমাত্র বালিকা বিদ্যালয় - ‘ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়’ ১৯৬২ সালে সরকারিকরণ হলে নিম্নবিত্ত মেয়েদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে ও কিছু শিক্ষক চাকুরি হারান। তিনি এদের নিয়ে ১৯৬২ সালে ‘বগুড়া গার্লস স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি তাঁর পিতামহ ও পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত ‘তমিজ উদ্দিন-ময়েজ উদ্দিন ট্রাস্ট’ এর মাধ্যমে পরিচালনা করেন। পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় ‘ভাণ্ডারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’। মজিবর রহমান ১৯৬২ সালে দুস্থদের চিকিৎসার জন্য সুবিল তীরে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু একইসময়ে সরকারিভাবে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হওয়ায় তিনি সুবিলের তীরে তাঁর প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটিকে একটি মহিলা কলেজে রূপ দেয়ার চিন্তা করেন। বহুমূত্র ও কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৬৩ সালের ৪ মে তারিখে মজিবর রহমানের অকাল মৃত্যু হলে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরীগণ একই বছরের জুলাই মাসে তার নামে ‘মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন।
**হবিবর রহমান ভাণ্ডারী (এমএনএ):
সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাগণের অন্যতম হলেন হবিবর রহমান ভাণ্ডারী। তিনি ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১ মে তারিখে বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শেখ ময়েজ উদ্দিন এবং মাতা ময়েজুন্নেছা খাতুন। পিতামহ শেখ তমিজ উদ্দিন। জানা যায়, তাঁর পূর্বপুরুষগণ প্রায় তিনশত বছর পূর্বে ভারতের বিহার রাজ্যের পাটনা হতে আগমন করে বগুড়া শহরে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। তিনি ছিলেন পিতা-মাতার চার পুত্র সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। হবিবর রহমান ভাণ্ডারীর বড় ভাই মজিবর রহমান ভাণ্ডারী বগুড়া জেলার একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। হবিবর রহমান ভাণ্ডারী ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া জেলা স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তিনি রাজশাহী কলেজ হতে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে এফ.এ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন। গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভের পর তাঁর বড় ভাই মজিবর রহমান ভাণ্ডারীর সঙ্গে ব্যবসায়ে যুক্ত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি “নর্থবেঙ্গল ট্যানারি লিমিটেড” নামে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। এছাড়া তিনি অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উদ্দ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ‘বগুড়া কটন স্পিনিং কোং লিঃ, ‘হাবিব ম্যাচ ফ্যাক্টোরি’, ‘লিথোগ্রাফিক প্রিন্টিং ওয়ার্কস লিঃ’, ‘গোলাম কিবরিয়া সোপ ওয়ার্কস’, ‘ভাণ্ডারী রাইস এন্ড ওয়েল মিলস’ ইত্যাদি।
তিনি ‘বগুড়া ইলেট্রিক্স লিমিটেড’, ‘ইস্ট্রার্ন ইন্সুরেন্স লিমিটেড’, ‘ন্যাশনাল শিপিং অপারেশন’, ‘গুলফা হাবিব লিমিটেড’ এবং ‘চট্রগ্রাম আগ্রাবাদ হোটেল’ এর অন্যতম পরিচালক ছিলেন। এছাড়া তিনি ‘ট্যনেসন ও ট্যারিফ কমিশন’, ‘সেন্ট্রাল ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এন্ড ডাইসরি কাউন্সিল’ এবং ‘সেন্ট্রাল কমার্স এডভাইজরি কাউন্সিল’ এর সদস্য ছিলেন।
হবিবর রহমান ভাণ্ডারী ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং অল্প সময়ের ব্যবধানে তাঁর মেধা, বিচক্ষণতা এবং সততার মাধ্যমে তিনি বগুড়া জেলা মুসলিম লীগের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। হবিবর রহমান ভাণ্ডারী বগুড়া চেম্বার অব কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের গৃহনির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখেন।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য থাকাকালীন (১৯৬২ ও ১৯৬৫ এর নির্বাচনে) তাঁর প্রচেষ্টায় তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬৭ - ১৯৭১) - এর আওতায় কলেজ উন্নয়নের জন্য ১৪.৯৮ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেন। ১৯৮৫ সালের ৮ আগস্ট সকাল ১১.০০ টায় কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ, অধ্যাপকমন্ডলী ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে এক মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে ভাণ্ডারী ভ্রাতৃবর্গের বেহেশত বাসিনী মাতার নামে কলেজ হোস্টেলের নামকরণ করা হয় ‘ময়জান নেছা ভাণ্ডারী হল’। পরবর্তীতে জনাব হবিবর রহমান ভাণ্ডারী সাহেব স্বহস্তে এই হলের নামখদিত মার্বেল ফলক হোস্টেলের গায়ে স্থাপন করেন।
হবিবর রহমান ভাণ্ডারী ১৯ জানুয়ারি ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তাকে নামাজগড় ভাণ্ডারী পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
**মোজাফ্ফর রহমান ভাণ্ডারী:
মজিবর রহমান ভান্ডারীর চার ভাইয়ের মধ্যে ৩য় ভাই মোজাফ্ফর রহমান ভান্ডারী বুলু হাজী নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি অত্যন্ত সৎ, কর্মঠ ও পরিশ্রমী ছিলেন। শিক্ষাঙ্গন ও শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অনস্বীকার্য।
**মোখলেছুর রহমান ভাণ্ডারী:
মরহুম মজিবর রহমান ভান্ডারী সাহেবের জ্যেষ্ঠ পুত্র হলেন মোখলেছুর রহমান ভান্ডারী। তিনি সন্তোষ হাজী সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি জাপান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এসেছিলেন এবং দক্ষতার সাথে ম্যাচ ফ্যাক্টরি, শিল্প কারখানা পরিচালনা ও মনিটরিং করেছেন। তিনি একজন গ্র্যাজুয়েট ছিলেন। খুব অল্প বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
**গোলাম কিবরিয়া ভাণ্ডারী:
গোলাম কিবরিয়া ভান্ডারী ‘কিবরিয়া ভান্ডারী’ নামে সর্বমহলে পরিচিত। তিনি মজিবর রহমান ভান্ডারী সাহেবের ২য় পুত্র। তিনি বেশ শিক্ষিত ছিলেন। সে সময়ে তিনি গ্র্যাজুয়েট ছিলেন। তারা চার ভাই মাতা ও চাচাদের সাথে পরামর্শক্রমে সমাজ সেবার মহৎ উদ্দেশ্যে তাদের পরলোকগত পিতা ও দাদার যুগ্ম নামে ময়েজউদ্দিন-তমিজউদ্দিন ট্রাস্ট গঠন করেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি চাচাদের সাথে মিলে দক্ষতার সাথে শিল্প কারখানা পরিচালনা করেছেন।
**মতিয়ার রহমান ভাণ্ডারী:
মতিয়ার রহমান ভাণ্ডারী ছিলেন মজিবর রহমান ভাণ্ডারী সাহেবের চতুর্থ ভ্রাতা। তিনি এ কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। কলেজ প্রতিষ্ঠাকরণে তিনি ভীষণ উৎসাহী ছিলেন এবং প্রতিষ্ঠাকল্পে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন।
**ডা. হাবিবুর রহমান (এম.এন.এ):
হাবিবুর রহমান ভান্ডারী : কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জনাব হাবিবুর রহমান ভান্ডারী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য থাকাকালীন (১৯৬২ ও ১৯৬৫-এর নির্বাচনে) তার প্রচেষ্টায় ৩য় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬৭ - ১৯৭১)-এর আওতায় কলেজ উন্নয়নের জন্য ১৪.৯৮ লক্ষ টাকা মঞ্জুর হয়।
১৯৮৫ সালের ৮ আগস্ট সকাল ১১টায় কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ, অধ্যাপকমণ্ডলী ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে এক মিলাদ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা ভান্ডারী ভ্রাতৃবর্গের বেহেস্তবাসিনী মাতার নামে কলেজ হোস্টেলের নামকরণ করা হয় ‘ময়জান নেছা ভান্ডারী হল’। পরবর্তীতে জনাব হাবিবুর রহমান ভান্ডারী সাহেব স্বহস্তে ‘ময়জান নেছা ভান্ডারী হল’ নাম খোদিত মার্বেল ফলক হোস্টেলেন গায়ে স্থাপন করেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস