প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমাদের জন্য যুক্তিবিদ্যা প্রথম পত্রের অন্তর্গত আরোহের ভিত্তি অংশের অন্যতম আকারগত ভিত্তি কার্যকারণ নীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হল। আশা করি তোমরা বিষয়টি মনোযোগ সহকারে পড়বে এবং বাসায় অনুশীলন করবে।
কার্যকারণ নীতি
কার্যকারণ নীতি আরোহ অনুমানের অন্যতম আকারগত ভিত্তি। এটি একটি মৌলিক ও পরম নিয়ম। এর উপর ভিত্তি করে আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে একে আরোহের আকারগত ভিত্তি বলে।
যুক্তিবিদ মিল বলেন, “যে ঘটনার শুরু আছে তার অবশ্যই একটা কারণ আছে।”
যুক্তিবিদ বেইন বলেন, “প্রত্যেক ঘটনা তার পূর্ববর্তী কোন ঘটনা বা ঘটনাসমূহের সাথে এমন সুনিশ্চিত ও সুসংগতভাবে সম্পর্কযুক্ত যে, যা ঘটলে এ ঘটনাটি ঘটে এবং যা না ঘটলে এ ঘটনাটা ঘটে না”।
তাই কার্যকারণ সম্পর্কে বলা যায় প্রতিটি ঘটনাই কোন একটা কারণ থেকে উদ্ভূত । অর্থাৎ যা ঘটে তার একটি কারণ থাকতে বাধ্য। বিনা কারণে কোন ঘটনা ঘটতে পারে না। কিংবা নিছক শূণ্য থেকে কোন কিছু সৃষ্টি হতে পারে না।
বেইন বলেন, “শূণ্য থেকে শুধু শূণ্যই জন্মায়”।
কার্যকারণ দুটি সাপেক্ষ পদ। একটিকে ব্যাখ্যা করতে হলে অপরটিকে বুঝতে হয়। কার্য কে ব্যাখ্যা করা হয় কারণ দিয়ে এবং কারণ কে ব্যাখ্যা করা হয় কার্য দিয়ে। তাই কার্য ও কারণের সম্পর্ক আবশ্যিক ও অনিবার্য।
আগুনের সাথে তাপের যেমন সম্পর্ক তেমনি কার্যের সাথে কারণের সম্পর্ক । “আগুন” থেকে তাপকে যেমন আলাদা করা যায় না,তেমনি কার্য থেকে কারণকে পৃথক করা যায় না।
কার্য কারণ নীতির মূল কথা হল প্রকৃতির প্রত্যেকটি ঘটনাই কারণ শৃঙ্খলে বাধা। জগতের প্রত্যকটি পূর্ববর্তী ঘটনা পরবর্তী ঘটনার সাথে এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত যে, পূর্বের ঘটনাটি ঘটলেই কেবল পরের ঘটনাটি ঘটে, আর পূর্বের ঘটনা না ঘটলে পরের ঘটনাটি ঘটে না। অর্থাৎ বিনা কারণে কোন ঘটনা ঘটে না।
কারণের সংজ্ঞা
সাধারণ অর্থে যার দ্বারা কোন ঘটনা ঘটে তাকে কারণ বলে। গতিশীল এ জগতে সকল বস্তু ও ঘটনা নিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এ পরিবর্তন কেন এবং কিভাবে হচ্ছে এর উত্তর খুজতে গিয়ে আমরা কারণের সন্ধান পাই। কারণ হলো এমন কিছু যা বস্তুর পরিবর্তন, গতি বা ক্রিয়ার জন্য দায়ী। কারণ আগে আসে এবং কার্য পরে আসে।
যুক্তিবিদ মিল বলেন, “যদি কোন পূর্ববর্তী ঘটনা বা ঘটনাবলীর সংমিশ্রণের পর অন্য একটি ঘটনা অনিবার্যভাবে এবং শর্তহীনভাবে অনুগমন করে তাহলে পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ এবং অনুবর্তী ঘটনাকে কার্য বলে”।
যুক্তিবিদ কার্ভেথ রীড বলেন, “গুণের দিক দিয়ে কারণ হলো কার্যের অব্যবহিত, শর্তহীন, অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা এবং পরিমানের দিক দিয়ে কারণ হলো কার্যের সমপরিমাণ”।
যেমন, একজন লোক সাপের কামড়ে মৃত্যু বরণ করল। এখানে সর্প দংশন পূর্ববর্তী ঘটনা এবং মৃত্যু পরবর্তী ঘটনা। এ দুটি ঘটনা একে অপরের সাথে অনিবার্য ও শর্তহীন সম্পর্কে আবদ্ধ।
মূল্যায়ন:
মরিয়ম খাতুন
সহকারী অধ্যাপক,দর্শন
সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ, বগুড়া।