প্রিয় শিক্ষার্থী, করোনা ভাইরাসের কারণে বেশ কিছুদিন যাবৎ তোমরা ঘরে বন্দি অবস্থায় আছো এতে তোমাদের নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা না হওয়ায় পড়াশুনায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে,তাই তোমাদের ক্ষতি পুরণে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ( বাংলা বানানের নিয়ম ) অধ্যায়টি লেকচার সীট আকারে তুলে ধরলাম।
প্রশ্নঃ বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মঃ
১. তৎসম শব্দের বানান যথাযথ ও অপরিবর্তিত থাকবে। কারণ এসব শব্দের বানান, ব্যাকরণগত প্রকরণ ও পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট
২. যে সব শব্দে ই, ঈ, বা উ, ঊ-কার উভয়েই শুদ্ধ সে সব শব্দে কেবল ই, বা উ-কার ব্যবহৃত হবে। যেমনঃ কিংবদন্তি, মঞ্জুরি, ইত্যাদি।
৩. রেফ এর পর ব্যঞ্জনবর্নের দ্বিত্ব হবে না। যেমনঃ অর্জন, কার্যালয়, কর্ম, ইত্যাদি।
৪. শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে না। যেমনঃ মূলত, কার্যত, ইত্যাদি।
৫. আলি প্রত্যয় যুক্ত শব্দে (বিশেষণ) পদে ই-কার হবে। সোনালি, বর্ণালি,
৬. ইংরেজি S বর্নের জন্য ‘স’ এবং Sh, Sion Ssion, Tion, ইত্যাদির জন্য সাধারণত ‘শ’ ব্যবহার করতে হবে। যেমনঃ স্টেশন, কমিশন, টেলিভিশন, ইত্যাদি।
৭. সকল অতৎসম অর্থাৎ (তদ্ভব, দেশি, বিদেশি) শব্দে কেবল ই এবং উ-কার হবে। যেমনঃ আরবি, বাঙালি, অযু, ইত্যদি।
৮. হসন্ত চিহ্ন যথা সম্ভব বর্জন করতে হবে। যেমনঃ কাত, মদ, চট, ফটফট, ইত্যাদি।
৯. তৎসম শব্দের বানানে ণ-ত্ব বিধি প্রযোজ্য হবে; অতৎসম শব্দের ক্ষেত্রে ণ-ত্ব বিধি প্রযোজ্য হবে না। তার বদলে ‘ন’ হবে। ইরান, কুরান, ইত্যাদি।
১০. ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত কয়েকটি বিশেষ শব্দে ‘য’ ব্যবহৃত হবে। যেমনঃ আযান, ওযু, কাযা, ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ ণ-ত্ব বিধি কাকে বলে? এর ৫ টি সূত্র উল্লেখ করো।
যে বিধি বা নিয়মানুসারে ‘ ণ’ এর ব্যবহারের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে ধারনা লাভ করা যায় তাকে ণ-ত্ব বিধি বলে।
নিচে পাঁচটি সূত্র উল্লেখ করা হলোঃ
১. ঋ, র, ষ, এর পরে ‘ণ’ হয়। যেমনঃ তৃণ, কারণ, ভাষণ, ইত্যাদি।
২. ট এবং ঠ এর পূর্বে ‘ণ’ হয়। যেমনঃ কণ্টক, লুণ্ঠন।
৩. প্র, পরা, নির, পরি, এ চারটি উপসর্গের পরে ‘ণ’ হবে। যেমনঃ প্রণাম, পরিণতি, ইত্যাদি।
৪. উত্তর, চন্দ্র, রাম, নার, এর পরে আয়ন যুক্ত হলে আয়নের ‘ন’ ‘ণ’-তে পরিণত হয়। যেমনঃ
চন্দ্র + আয়ন = চন্দ্রায়ণ। উত্তর + আয়ন = উত্তরায়ণ।
উত্তর + আয়ন = উত্তরায়ণ। নার + আয়ন = নারায়ণ।
৫. কতগুলো শব্দ স্বাভাবিক ভাবেই ‘ণ’ হয়। যেমনঃ লবণ, চাণক্য, লাবণ্য, ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ ষ-ত্ব বিধি কী ? এর পাঁচটি নিয়ম লেখ।
যে বিধান বা নিয়মানুসারে ‘ষ’ এর ব্যবহারের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে ধারনা লাভ করা যায় তাকে ষ-ত্ব বিধি বলে।
নিচে পাঁচটি নিয়ম উল্লেখ করা হলোঃ
১. ঋ-কার এর পরে ‘ষ’ হয়। যেমনঃ ঋষি, কৃষি, ইত্যাদি।
২. ট এবং ঠ এর পূর্বে ‘ষ’ হয়। যেমনঃ কষ্ট, বলিষ্ঠ, ইত্যাদি।
৩. ই-কারান্ত এবং উ-কারান্ত এর পরে ( অতি, অধি, অপি, অভি, প্রতি, পরি, নি, অনু, সু ) উপসর্গের পরে কতগুলো ধাতুর ‘স’ ‘ষ’-তে পরিণত হয়। যেমনঃ অভিষেক, অনুষ্ঠান, পরিষদ, ইত্যাদি।
৪. ক, খ, প, ফ এসব বর্ণের আগে ইঃ বা উঃ থাকলে সন্ধির ফলে বিসর্গের জায়গায় সর্বদা ‘ষ’ বসবে। যেমনঃ পরিঃ + কার = পরিষ্কার
দুঃ + কর = দুষ্কর।
৫. কতগুলো শব্দে স্বভাবতই ‘ষ’ হয়। যেমনঃ আষাঢ়, ভাষণ, ভাষা ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ বাংলা বানানে ই-কারের নিয়ম উদাহরণ সহ আলোচনা কর।
১. তৎসম শব্দ যদি তদ্ভব শব্দে রূপান্তরিত হয় তাহলে শব্দের অন্তর্গত ঈ-কার, ই-কার হয় ।
যেমনঃ বাটী > বাড়ী > বাড়ি।
২. স্ত্রীবাচক তদ্ভব শব্দে ই-কার ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ পিসি, মাসি, চাচি ইত্যাদি।
৩. বাংলা ক্রিয়াবাচক শব্দে ই-কার ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ করি, লিখি, ধরি, পড়ি ইত্যাদি।
৪. বিদেশি শব্দে ই-কার ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ খলিফা, খতিয়ান, শহিদ, ইত্যাদি।
৫. আধুনিক বাংলা বানানের নিয়মানুযায়ী জাতি, দেশ, ও ভাষার ক্ষেত্রে ই-কার হয়।
জাতিঃ বাঙালি, ইহুদি
ভাষাঃ আরবি, ফারসি
দেশঃ ইতালি, জার্মানি
৬. ব্যতিহার ক্রিয়ার ক্ষেত্রে ই-কার হয়। যেমনঃ কানাকানি, কোলাকুলি, চুলাচুলি, ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দ ব্যবহারের নিয়মগুলো উদাহরণসহ আলোচনা কর।
১. ইংরেজি ‘St’ বর্ণের জন্য ‘স্ট’ লেখা হয়। যেমনঃ স্টেশন, ( Station ), স্টোভ, ( Stove ) ইত্যাদি।
২. আরবি, ফারসি, শব্দে সে, সিন, সোয়াদ, বর্ণগুলোর জন্য ‘স’ শিন-এর জন্য ‘শ’ ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ সালাম – (সিন), শাবান – (শিন) ইত্যাদি।
৩. বিদেশি শব্দে (ইংরেজি) অবিকৃত উচ্চারণের ক্ষেত্রে এ-কার ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ এন্ড, নেট।
৪. বিদেশি শব্দে (ইংরেজি) বিকৃত বা বাঁকা উচ্চারণে ‘অ্যা’ বা ‘এ্যা’ হয়। যেমনঃ অ্যান্ড, অ্যাসিড।
৫. ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত কয়েকটি বিশেষ শব্দে ‘য’ হয়। যেমনঃ আযান, অযু, নামায, ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মানুসারে সংস্কৃত/তৎসম শব্দের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
১. তৎসম অর্থাৎ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সংস্কৃত শব্দের বানান যথাযথ ও অবিকৃত থাকবে। কারণ এসব শব্দের বানান, ব্যকরণ প্রকরণ ও পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট রয়েছে।
২. যে সব শব্দে ই, ঈ, বা উ, ঊ-কার উভয়েই শুদ্ধ সে সব শব্দে কেবল ই, বা উ-কার ব্যবহৃত
হবে। যেমনঃ কিংবদন্তি, মঞ্জুরি, ইত্যাদি।
৩. রেফ এর পর ব্যঞ্জনবর্নের দ্বিত্ব হবে না। যেমনঃ অর্জন, কার্যালয়, কর্ম, ইত্যাদি।
৪. সন্ধির ক্ষেত্রে ক, খ, গ, ঘ পরে থাকলে পূর্বপদের অন্তস্থিত ‘ম’ এর স্থানে ং (অনুস্বার) লেখা যাবে। যেমনঃ অহংকার, ভয়ংকর, বিকল্পে ‘ঙ’ লেখা যাবে। ‘ক্ষ’ এর পূর্বে সর্বত্র ‘ঙ’ হবে । যেমনঃ অঙ্ক, কঙ্কাল, আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি।
৫. শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে না। যেমনঃ মূলত, কার্যত, ইত্যাদি।
জনাব মো: শাফিউল আলম, প্রভাষক, বাংলা বিভাগ, সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ, বগুড়া।