প্রিয়,
এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তোমাদের জন্য এবার বাংলা ২য় পত্রের শব্দগঠন অধ্যায়ের ‘উপসর্গ’ নিয়ে একটু লিখলাম আশাকরি মনোযোগ সহকারে পড়বে এবং অন্যদের পড়ার সুযোগ তৈরি করে দিবে। এবারের পরীক্ষার জন্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্নঃ “ উপসর্গের অর্থবাচকতা নাই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে “ – ব্যাখ্যা করো।
উপসর্গ হচ্ছে এক শ্রেণির অব্যয়,যাদের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই। এই অর্থহীন অব্যয় কোনো ক্রিয়ামূল বা শব্দের পূর্বে বসে ক্রিয়ার মূল বা শব্দের অর্থের নানা মাত্রিক পরিবর্তন ঘটায় বা নানা অর্থ সৃষ্টি করে অথচ নিজেরা কোনো বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে না,তাকে উপসর্গ বলে।
যেমনঃ আ, সু, বি, নি, ইত্যাদি।
উপসর্গ কখনো স্বাধীনভাবে কোনো অর্থ প্রকাশ করতে পারে না কিন্তু কোনো শব্দের পূর্বে যখন যুক্ত হয় তখন সে শব্দের পরিপূর্ণ পরিবর্ধন, সংকোচন, সম্প্রসারন ইত্যাদি পরিবর্তন ঘটায়। তাই বলা যায়, “উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা রয়েছে।“
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- আ, প্র, পরি, উপ, উপসর্গের কোনো অর্থ নেই কিন্তু এরা যদি “হার” শব্দের পূর্বে বসে তাহলে নতুন নতুন অর্থ সৃষ্টি করে। যেমনঃ
আ + হার = আহার ( খাওয়া অর্থে ), পরি + হার = পরিহার ( ত্যাগ করা অর্থে)
প্র + হার = প্রহার ( আঘাত করা অর্থে ), উপ + হার = উপহার ( উপঢৌকন অর্থে) ।
ইত্যাদি অর্থে শব্দের পরিবর্তন সাধন হচ্ছে, এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে , উপসর্গের নিজস্ব কোনো অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা রয়েছে, উক্তিটি সঠিক।
প্রশ্নঃ উপসর্গ কত প্রকার ও কী কী ?
বাংলা ভাষায় উপসর্গ তিন প্রকার। যথাঃ
ক. খাঁটি বাংলা উপসর্গ = ২১ টি
খ. তৎসম / সংস্কৃত উপসর্গ = ২০ টি
গ. বিদেশি উপসর্গ ( যেমন- আরবি, ফারসি, ইংরেজি, হিন্দি )
১. আরবি, ৬ টি ( যেমন- আম, খাস, লা, গর, বাজে, খায়ের )
২. ফারসি, ১০ টি ( যেমন- কার, দর, না, নিম, ফি, বদ, বে, বর, ব, কম )
৩. ইংরেজি, ৪ টি ( যেমন- ফুল, হাফ, সাব, হেড )
৪. হিন্দি, ২ টি ( যেমন- হর, হরেক
প্রশ্নঃ নিচের উপসর্গ যোগে শব্দ গঠন কর এবং বাক্য রচনা কর।
অ, অতি, অনু, প্রতি, পরি, গর,
উপসর্গঃ শব্দগঠনঃ বাক্য রচনাঃ
অ অবেলা অবেলায় তুমি কোথায় যাচ্ছ?
অতি অতিবৃষ্টি অতিবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়।
অনু অনুগ্রহ ছোটবেলায় আমরা পিতা-মাতার অনুগ্রহে বড় হয়েছি।
প্রতি প্রতিরোধ কথায় আছে প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধ শ্রেয়।
পরি পরিহার বদঅভ্যাস পরিহার কর।
গর গরমিল হিসাবে গরমিল হয়ে গেল।
বিঃ দ্রঃ এভাবে খাঁটি বাংলা, তৎসম, ও বিদেশি প্রত্যেকটি উপসর্গ যোগে নতুন শব্দ তৈরি করা শিখতে হবে, এবং কোনটা কোন শ্রেণির উপসর্গ সেগুলো খেয়াল রাখতে হবে। সব শেষে প্রত্যেকটি শব্দের অর্থপূর্ণ বাক্য রচনা নিজে নিজে করা শিখতে হবে।
প্রশ্নঃ উপসর্গ অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর।
উপসর্গ শব্দ বা ধাতুর পূর্বে বসে। অনুসর্গ শব্দের পরে বসে।
নিজস্ব অর্থ নেই, তবে নতুন শব্দ গঠনের ক্ষমতা আছে। নিজস্ব অর্থ আছে। কিন্তু নতুন শব্দ গঠনের ক্ষমতা নেই।
অর্থের পরিবর্তন ঘটায়। শব্দের অর্থের কোনো পরিবর্তন ঘটায় না।
স্বাধীন পদ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না। কখনো কখনো স্বাধীন পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
অব্যয় সূচক শব্দাংশ। অব্যয় জাতীয় শব্দ।
প্রশ্নঃ উপসর্গ ও প্রত্যয়ে এর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর।
উপসর্গ প্রত্যয়
১. উপসর্গ শব্দ বা ধাতুর পূর্বে বসে। ১. প্রত্যয় শব্দ বা ধাতুর পরে বসে।
২. উপসর্গ হচ্ছে অব্যয়। ২.প্রত্যয় হচ্ছে বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি.
৩. উপসর্গ তিন প্রকার। ৩. প্রত্যয় দুই প্রকার।
৪. উপসর্গ অর্থের পরিবর্তন ঘটায়। ৪. প্রত্যয় অর্থের পরিবর্তন ঘটায় না।
৫. উদাহরণ= প্র+হার এখানে প্র একটি উপসর্গ। ৫. উদাহরণ= হাত+ল এখানে ল একটি প্রত্যয়।
প্রশ্নঃ উপসর্গ কাকে বলে? বাংলা শব্দ গঠনে উপসর্গের ভূমিকা আলোচনা কর।
যে সকল বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি শব্দের পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে, এবং শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটায় তাদেরকে উপসর্গ বলে।
যেমনঃ ‘আ’ একটি উপসর্গ। এটি চরণ শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়ে ‘আচরণ’ নতুন শব্দ গঠিত হয়েছে, এবং শব্দের অর্থের পরিবর্তন সাধন করেছে।
এভাবে বাংলা শব্দ গঠনের ক্ষেত্রে উপসর্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা উপসর্গ যুক্ত হলে একটি শব্দ সম্পুর্ণ নতুন রূপ ধারন করে এবং অর্থের পরিবর্তন ঘটায়, যা শব্দ গঠনের অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় সম্ভব নয়। আবার উপসর্গ কখনো কখনো শব্দের অর্থের সংকোচন অথবা সম্প্রসারন ঘটিয়ে থাকে।
বিঃ দ্রঃ তোমাদের কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে আমাকে ম্যাসাঞ্জার ও ইনবক্সে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবে।
মোঃ শাফিউল আলম
বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)
প্রভাষক, বাংলা বিভাগ
সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ,বগুড়া।